কুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রদলের হামলার ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রদল। মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে সাতটায় বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এতে যোগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী। এরপর রাত সাড়ে আটটায় বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। দেখা যায়, ছাত্রদলের বিক্ষোভে ঢাকা কলেজ, তিতুমীর কলেজসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিরাগত নেতাকর্মীরাও অংশগ্রহণ করেন। বৈষম্যবিরোধীর নেতৃবৃন্দ বলেন, আওয়ামী লীগ আমলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগ যে নির্যাতন-নিপীড়ন করতো তার ফিরিয়ে আনার চেষ্টায় লিপ্ত ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। একে নব্য ফ্যাসিবাদ উল্লেখ করে তা রুখতে প্রয়োজনে আবারও জুলাই- আগস্টের মতো ছাত্র-জনতা রুখে দাঁড়াবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন প্লাটফর্মের নেতারা। সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, যারা শহীদ হয়েছে তাদের রক্তের দায় আমাদের উপর রয়েছে। শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কেমন রাজনীতি করতে চায়, কেমন পরিবেশ চায়…তাদের ভাষায় কথা বলতে হবে। কিন্তু আপনারা যদি আবার ক্যাডার রাজনীতি করতে চান, আবার ছাত্রলীগ করতে চান, সদস্য সচিব আরিফ সোহেল বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি নির্মম নির্যাতন ও নিপীড়ন আবার ফেরত এসেছে। ছাত্রলীগের স্টাইলে হামলাকে জায়েজ করছে অনেকে। ৫ আগস্টের পরে আমরা আর জাহেলি আমলে ফেরত যেতে চাই না। যারা আবার ছাত্রলীগের মতো হতে চাইবে আমরা তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবো। সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক জাকির হোসেন মঞ্জু বলেন, আবার যদি কেউ ছাত্রলীগের মতো ফিরে আসতে চায়, আর যদি কেউ আমাদের ভাইদের উপরে হামলা করে তবে আমরা বরদাশত করবো না। তাদেরকে প্রতিহত করতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আবার রাজপথে নামবে। নতুন বাংলাদেশে ছাত্রলীগের স্টাইল ও ফ্যাসিবাদী কায়দায় হামলা চলবে না। রাত সাড়ে ৮টার দিকে টিএসসি থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এ সময় ঢাবি শাখা ছাত্রদলের সঙ্গে ঢাকা কলেজসহ ঢাকার বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা যোগ দেন। বিক্ষোভ মিছিল টিএসসি থেকে শুরু হয়ে ভিসি চত্বর ঘুরে ডাস চত্বর সংলগ্ন যাত্রী ছাউনির সামনে এসে সমাবেশ করে। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস, সহ-সভাপতি আনিসুর রহমান খন্দকার অনিক, সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন, সাংগঠনিক সম্পাদক নুর আলম ভুঁইয়া ইমন প্রমুখ। এদিকে ছাত্রদলের অভিযোগ তাঁদের উপরই হামলা করা হয়েছে। ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, আপনারা জানেন দু-দিন আগে কুয়েটে একটি গুপ্ত সংগঠন ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিল বের করে। সেখানে আমাদের ছাত্রদলের ভাইয়েরা পাশ দিয়ে যাবার সময় তাদের উপর বিনা উসকানিতে হামলা করে তাদের আহত করে। তারা ক্যাম্পাসে মব সৃষ্টি করে বুঝাতে চায় ছাত্রলীগের মতই ছাত্রদল ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যারা ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে চায়, তারাই ক্যাম্পাসগুলোতে নামে-বেনামে বিভিন্ন সংগঠনের দোকান খুলে বসেছে। তিনি বলেন, সারা দেশে বিশেষ করে ক্যাম্পাসগুলোতে একটি গুপ্ত সংগঠন আমাদের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়ে আসছে। তারা বলে আমরা নাকি ডাকসু চাই না, অথচ আমাদের দাবিগুলোতে ডাকসু দেওয়ার প্রস্তাবনা রয়েছে। আমরা সে অনুযায়ী সামনে এগিয়ে যাচ্ছি। এখনো ক্যাম্পাসে গুপ্ত সংগঠনটি একের পর এক মব ক্রিয়েট করে যাচ্ছে। তারা নিজেকে খুব মেধাবী মনে করে। এই মূর্খের দল জানেই না এই বিদ্যাপিঠের শিক্ষার্থীরা মবের ফাঁদে পা দিবে না৷ শিক্ষার্থীরা বুঝে গেছে, মব ক্রিয়েট করে গুপ্ত চর্চার রাজনীতি করা সম্ভব না। তিনি আরও বলেন, ছাত্রদলের ছায়াতলে প্রকৃত সাধারণ শিক্ষার্থীরা আশ্রয় নিয়ে কথা বলতে পারছে। ছাত্রদল শিক্ষার্থীদের চাওয়া পাওয়াকে কেন্দ্র করে তাদের মতামতের ভিত্তিতে কর্মসূচি প্রণয়ন করে। বিগত দিনগুলোতে ছাত্রদল মৃত্যুর উপত্যকায় দাঁড়িয়ে মুক্তির স্লোগান দিয়েছে। ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ৭১, ৯০ ও ২৪ এর পরাজিত শক্তিরা এখনও উৎ পেতে আছে। তাই আমাদের বিরুদ্ধে অনেক অপপ্রচার করা হবে। আপনাদের চরিত্র হননের চেষ্টা করা হবে। তাই আপনারা সতর্ক থাকবেন। কোনো গুপ্ত বাহিনীর ফাঁদে পা দিবেন না। আপনাদের নেতৃত্বের উপর দেশের মানুষ ও শিক্ষার্থীরা নির্ভর করছে। গুপ্ত বাহিনীর উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আপনারা সামনে আসেন, নিজের পরিচয় প্রকাশ করুন, দেখবো আপনাদের জনপ্রিয়তা কতটুকু। ফেসবুকে মব ক্রিয়েট করে অপপ্রচার করা হলে তার দাঁত ভাঙা জবাব দেওয়া হবে৷ শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বক মিছিল মিটিংয়ে আনা হলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কেউ যদি জোর করে মিছিল মিটিংয়ে নিয়ে আসে তার প্রমাণ আমাদের দিবেন। আমি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস দায়িত্ব নিয়ে বলছি তাকে আইনের হাতে আমি নিজ হাতে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করবো।

By তালাশ বাংলা ডেস্ক

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ আক্কাস আল মাহমুদ হৃদয়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *