কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে প্রেমের ঘটনার জের ধরে মেয়ে পক্ষের স্বজনদের হামলায় আহত মো. আতিক (১৭) নামের শিক্ষার্থী চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। অভিযুক্তদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে এলাকাবাসী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহমেদ। নিহত আতিক চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার সোনাকাটিয়া আদর্শ গ্রামের আবদুল মান্নান মিয়ার ছেলে। আতিক স্থানীয় চৌদ্দগ্রাম সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিহত আতিকের সহপাঠী মো. সজিবের সঙ্গে একই এলাকার সৌদিপ্রবাসী মো. নেয়ামত উল্যাহর মেয়ে নাজনিন সুলতানা নাদিয়ার প্রেমের সূত্র ধরে গত বছরের ১৩ অক্টোবর পালিয়ে বিয়ে করে। মেয়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি অপহরণের অভিযোগ এনে নাদিয়া মা নাজমা বেগম চৌদ্দগ্রাম থানায় সজিবসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে। এর কয়েক দিন পর পুলিশ নাদিয়াকে উদ্ধার করে আদালতের মাধ্যমে তার পরিবারের জিম্মায় দেয়। এ ঘটনায় দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় ক্ষোভ বিরাজ করছিল। এরই জের ধরে সোমবার রাতে নাদিয়ার বাবা নেয়ামত উল্যার নেতৃত্বে ৫-৬ জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি আতিককে সোনাকাটিয়া এলাকায় পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে স্থানীয়রা তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এলে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। সেখানেও তার অবস্থা দ্রুত অবনতির দিকে গেলে রাতেই তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউতে সিট না পেয়ে তার স্বজনরা একটি প্রাইভেট ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার বিকালে তার মৃত্যু হয়। আতিকের মৃত্যুর সংবাদটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তের মধ্যে এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের দাবিতে এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিল করে নাদিয়াদের বাড়ি-ঘরে হামলার চেষ্টা চালায়। খবর পেয়ে থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। চৌদ্দগ্রাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক হাসান মাহমুদ বলেন, ‘আতিকের শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করি। তার অবস্থা দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকলে আমরা তাকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করি। শুনেছি সে ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মৃত্যুবরণ করেছে।’ আতিকের বাবা আবদুল মান্নান মিয়া বলেন, ‘আমার গ্রামের একটি প্রেমের ঘটনাকে কেন্দ্র করে নাদিয়ার বাবা নেয়ামত উল্যার নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা আমার ছেলেকে অন্যায়ভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে। আমার ছেলে এবার চৌদ্দগ্রাম সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল।’ চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘পূর্ব বিরোধের জের ধরে সোমবার রাতে আতিক নামের এক স্কুল ছাত্রকে প্রতিপক্ষের লোকজন পিটিয়ে আহত করে। ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার বিকালে মারা যায়। মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে থানা পুলিশের অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আমরা জড়িতদের গ্রেপ্তারের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

By তালাশ বাংলা ডেস্ক

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ আক্কাস আল মাহমুদ হৃদয়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *