জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা মরহুম মুহাম্মদ আলতাফ হোসেন কর্তৃক প্রভাবিত ২১ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ( ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪) শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের মিলনায়তনে এক মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।উক্ত মহাসমাবেশে জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের মহাসচিব মুহাম্মদ কামরুল ইসলামের সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন সভাপতি মোঃ মমিনুর রশীদ শাইন। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোঃ ওবায়দুর রহমান শাহীন, এ সময়ে তিনি বলেন,সাংবাদিকরা চতুর্থ স্তম্ভ,সাংবাদিকদেরকে রাষ্ট্রের বিভিন্ন কাজে সম্পৃক্ত করতে হবে।সাংবাদিকদের কোন রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি সম্পর্ক না করার আহ্বান করেন তিনি। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব মোঃ কাদের গনি চৌধুরী এ সময় তিনি বলেন,দলবাজি, অপসাংবাদিকতা, হলুদ সাংবাদিকতা এবং তথ্যসন্ত্রাস সাংবাদিকদের মর্যাদা ম্লান করে দিচ্ছে। বস্তুনিষ্ঠ, সৎ, নির্ভীক সাংবাদিকতা দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গল বয়ে আনে। হলুদ সাংবাদিকতা পরিহার করতে হবে এবং বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার প্রশ্নে কোনও আপোষ করা চলবে না। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ শহিদুল ইসলাম,এ সময় তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমকে সবসময় জনগণের পক্ষে থেকে কল্যানমূলক কাজ করতে।জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার ২১ দফা দাবি বাস্তবায়ন লক্ষ্যে কাজ করে যেতে হবে।সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির হত্যার ১২ বছর হয়ে গেছে। কিন্তু আমরা কোনও বিচার পাইনি। যেহেতু ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়েছে, তাই বর্তমান সরকারকে বলতে চাই— অবিলম্বে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খুরশিদ আলম বলেন,সাংবাদিকদের আত্মসমালোচনা শিখতে হবে।আমরা যেমন সাংবাদিক সুরক্ষা আইন চাই, ঠিক একইভাবে আর কোনও রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে গিয়ে যেন কোনও সাংবাদিক আহত না হয় সেটাও চাই। বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহিন বলেন, দেশে প্রকৃত অর্থেই জনস্বার্থে সাংবাদিকতার সংকট রয়েছে এবং এ থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে সংস্কার জরুরি। তিনি মনে করেন, দেশে বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার হয়েছে এবং এই আমলেই সাংবাদিকতার সংস্কার হওয়া উচিত। বিএফইউজের সিনিয়র সহকারী মহাসচিব বাছির জামাল বলেন, সাংবাদিকদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, শারীরিক ও মানসিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সংবাদমাধ্যম যদি মালিকপক্ষের মুনাফা অর্জনের হাতিয়ার হয়ে থাকে তাহলে সাংবাদিকতায় সংস্কার সম্ভব নয়। জাতীয় মহাসমাবেশে অংশ নেন— শাহজান মোল্লা, আলমগীর গনি, খায়রুল ইসলাম, মিজানুর রহমান প্রিন্স, জামাল হোসেন, আরিফুর রহমান আজাদ, হাসান সরকার জুয়েল,কুমিল্লা জেলা কমিটির সভাপতি তরিকুল ইসলাম তরুণ,সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানা মজুমদার সহ সমাবেশে দেশের বিভিন্ন বিভাগ, মহানগর, জেলা ও উপজেলা থেকে আগত সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এসময় বক্তারা সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় মরহুম মুহম্মদ আলতাফ হোসেন কর্তৃক পেশকৃত ২১ দফা বাস্তবায়নের গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং এই দাবি বাস্তবায়নে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। মহাসমাবেশে বক্তারা আরো বলেন, সাংবাদিকদের পেশাগত উন্নয়ন এবং তাদের অধিকার সুরক্ষার জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানান। পরিশেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের ধন্যবাদ দিয়ে জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার মহাসমাবেশ সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।
সাংবাদিকদের ২১ দফা দাবি সমূহ: ১. গণমাধ্যম ও গণমাধ্যম কর্মীদের দমনকারী সকল কালাকানুন বাতিল। ২. সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ প্রেস কাউন্সিলে নিষ্পত্তি। ৩. সাংবাদিক পেনশন স্কিম গ্রুপ বীমা ও অন্যান্য সুবিধা চালু। ৪. ষাটোর্ধ্ব বয়স্ক সাংবাদিকদের সরকারি কোষাগার থেকে ভাতা প্রদান। ৫. সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ফৌজদারী দণ্ডবিধি প্রয়োগ ও গ্রেফতার পরিহার। ৬.পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে ক্ষতিগ্রস্থ সাংবাদিকদের ক্ষতিপুরণ প্রদান। ৭. বিভাগীয় শহরে পিআইবির শাখা স্থাপনসহ সাংবাদিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সম্প্রসারণ। ৮. জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অগ্রাধিকার। ৯. সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে আর্থিক সহযোগিতা। ১০. জাতীয় সাংবাদিক অধিকার সনদ প্রণয়ন। ১১. সাংবাদিক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন। ১২. প্রেস কমিশন গঠন করে গণমাধ্যমের জন্য শিল্পনীতি প্রণয়ন। ১৩. গ্রামীণ সাংবাদিকদের নিয়োগপত্র প্রদান ও বেতন বোর্ড রোয়েদাদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত। ১৪.টেলিভিশন ও রেডিও সাংবাদিকদের বেতন কাঠামো সমতা। ১৫. বিজ্ঞাপন নীতিতে সুষম নীতি অনুসরণ। ১৬. ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত। ১৭. সামাধ্যম নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ পরিহার। ১৮.বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনকে সরকারি নিয়ন্ত্রণমুক্ত রাখা। ১৯. বেকার সাংবাদিকদের কর্মসংস্থান বা ভাতা প্রদান। ২০.প্রথিতযশা সাংবাদিকদের রচনা প্রকাশে উদ্যোগ। ২১.অনলাইন সংবাদমাধ্যমের জন্য সহজ নীতিমালা প্রণয়ন।
