আক্কাস আল মাহমুদ হৃদয়।।
পিকনিকের চাঁদার টাকা না দিতে পেরে অভিমানে ফারজানা আক্তার নামে এক স্কুল ছাত্রীর আত্মহত্যার খবর পাওয়া গেছে।ঘটনাটি ঘটেছে (৫ মার্চ ২০২৪) মঙ্গলবার সকাল ৯ঘটিকায় কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার বাকশীমূল ইউনিয়নের উত্তর আনন্দপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে। খবর পেয়ে বুড়িচং থানার পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানায়,উপজেলার বাকশীমূল ইউনিয়নের আজ্ঞাপুর গ্রামের মোরশেদা বেগম বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক শিক্ষা সফর পিকনিকের জন্য জনপ্রতি শিক্ষার্থীদের জন্য ১২শত টাকা চাঁদা নির্ধারণ করে কর্তৃপক্ষ। এই চাঁদার টাকা জমার শেষ দিন নির্ধারণ করা হয়েছিল মঙ্গলবারে।
এই দিন সকালে স্কুলে যাওয়ার আগে মা–বাবার কাছে ধার্য্যকৃত পিকনিকের ১২শত টাকা চায় ফারজানা আক্তার।তার মা-বাবা নির্ধারিত চাঁদার টাকা মেয়েকে না দিতে পেরে ঘরের ভিতরে স্কুলে যাওয়া আগে ফারজানা আক্তার গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।
সে স্থানীয় মোরশেদা বেগম বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী এবং উত্তর আনন্দপুর গ্রামের বীরমুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হকের ২য় স্ত্রীর মেয়ে। সরেজমিনে গিয়ে নিহতের মা সালেহা বেগমের সাথে কথা বললে তিনি কান্নার সুরে তালাশ বাংলাকে বলেন,তার মেয়ে ফারজানা আক্তার স্কুলের ধার্য্যকৃত চাঁদার জন্যই আত্মহত্যা করেছে। তিনি আরো জানান,বাড়ির অন্যের কাছ থেকে ৬০০ টাকা হাওলাত করে তাকে দেন।তার বাবা বীরমুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক জানান,৬০০ টাকা অন্যের কাছ থেকে ধার করে এনে স্কুলে যাওয়ার আগে ফারজানা আক্তারকে দেন এবং আরো ৬০০ টাকা বাজার থেকে দুধ বিক্রি করে দিবেন বলে বাজারে চলে যায়।ফজলুল হক বাজারে যাওয়ার পর খবর পায় তার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে।তাদের এই অভারের সময়ে একসাথে ১২০০ টাকা না থাকায় তাই মেয়েকে সম্পূর্ণ টাকা দিতে ব্যর্থ হয়। নিহতের খালা তালাশ বাংলাকে জানান,তার বোন জামাই ফজলুল হক সম্পূর্ণ টাকা না দেয়ায় ফারজানা অভিমানে ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে তীরের সাথে গলায় উড়না পেঁছিয়ে ঝুলে আত্মহত্যা করে। পরিবার মনে করছিলেন ফারজানা স্কুলে যাওয়ার জন্য স্কুল ড্রেস পড়ে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। স্থানীয়রা জানান স্কুল ছাত্রীর ফারজানার মৃত্যুর জন্য শিক্ষক ও পরিবারের লোকজন দায়ী।এছাড়াও এলাকার সচেতন নাগরিকরা জানান বর্তমানে বিভিন্ন স্কুলে বড় বড় অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকেন ও খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়।অতিথিরা খাবার খেলেও শিক্ষার্থীরা সারাদিন অনুষ্ঠানে থেকেও খাবার থেকে বঞ্চিত থাকতে দেখা যায় কিন্তু স্কুলের বার্ষিক শিক্ষা সফরের সময় শিক্ষার্থীদের কাছে চাঁদার জন্য চাপসৃষ্টি করা থাকে।এ বিষয়ে অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ তৌহিদুল ইসলাম ও সভাপতি সাবেক মাস্টার নুরুল ইসলাম উড়ফে আব্দুল হক চেয়ারম্যান বলেন,প্রতি বছরে বার্ষিক শিক্ষা সফরে যাওয়ার জন্য চাঁদা নির্ধারণ করা হয়।শিক্ষার্থীরা সবাই যেতে হবে বাধ্যবাধকতা নেই।স্কুল ছাত্রীর ফারজানা আত্মহত্যা করেছে এমন খবর পেয়ে শিক্ষক ও কমিটি বৃন্দ বাড়িতে গিয়ে ওই ছাত্রীর মৃত্যু প্রকৃত কারণ জানার চেষ্টা করছেন। ওইদিন খবর পেয়ে বুড়িচং থানা ওসির নির্দেশনায় এসআই রেজাউল করিম ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘরের ভিতর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়ে দেন। মৃত্যুর সঠিক কারণ জানার জন্য পুলিশের তদন্ত চলমান রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা যায়।
বুড়িচং উপজেলা ইউএনও সাহিদা আক্তার তালাশ বাংলাকে বলেন,ফারজানা আক্তার নামে এক স্কুল ছাত্রীর আত্মহত্যার খবর শুনেছি,আজকাল ছেলে-মেয়েরা অতি ইমোশনাল হয়ে এধরণের ঘটনা ঘটিয়ে থাকে যা করা উচিত নয়। এমন ধরণের ঘটনা ইদানিং বেড়ে গেছে। এমন ঘটনা যেন আর না ঘটে সেদিকে শিক্ষক ও অভিভাবকরা সচেতন থাকতে হবে।স্কুলের চাঁদা নির্ধারণ ক্ষেত্রে আমি অবগত নই। তবে তদন্ত করে বিষয়টি দেখবো।