বগুড়ায় সেউজগাড়িতে রথযাত্রা বের করার সময় বিদ্যুৎস্পর্শে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত আরও ৪৩ জন। এরমধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। রোববার (৭ জুলাই) বিকেল সোয়া ৫টার দিকে ইস্কন মন্দির থেকে রথযাত্রা বের হওয়ার পর ১০০ গজ দূরে বগুড়া শহরের সেউজগাড়ি আমতলা মোড় এলাকায় এ দুঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- বগুড়ার সদর উপজেলার তিনমাথা রেলগেটের লঙ্কেশ্বরের স্ত্রী আতসী রানী (৪০), শাজাহানপুর উপজেলার গোহাইল গ্রামের মৃত সুদেবের মেয়ে শ্রীমতি রঞ্জিতা মোহন্ত (৬০), আদমদীঘি উপজেলার কুন্ডু গ্রামের মৃত ভবানী মহন্তের ছেলে নরেশ মহন্ত (৬০), শিবগঞ্জ উপজেলার আটমুল ইউনিয়নের কুলুপাড়া গ্রামের মৃত নরেন্দ্র কুমারের ছেলে অলক কুমার সরকার (৪২) ও সারিয়াকান্দি উপজেলার সাহাপাড়ার বাসুদেব সাহার স্ত্রী জলি সাহা (৩০)। এ ছাড়া আরও এক অজ্ঞাত নারীর মৃত্যু হয়েছে। আহতদের মধ্যে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতাল ও ২৫০ শয্যা মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ৪৩ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বিদ্যুৎস্পর্শে সৃষ্ট আগুনে অনেকের শরীর ঝলসে গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, দুর্ঘটনার আগ পর্যন্ত রথযাত্রার পরিবেশ ছিল উৎসবমুখর। বিদ্যুৎস্পর্শ হওয়ার পর লোকজন ‘আগুন আগুন’ বলে চিৎকার শুরু করেন। এ সময় অনেক লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ছুটতে দেখা যায়। বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. স্নিগ্ধ আখতার বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ছয়জন মারা গেছেন। এর মধ্যে চারজন নারী ও দুইজন পুরুষ। আমি এই মুহূর্তে হাসপাতালে আছি। পরে বিস্তারিত জানাতে পারব। রথযাত্রায় অংশ নেওয়া কালিতলার কলেজছাত্র অনিমেশ সরকার জানান, সেউজগাড়ী ইসকন মন্দির থেকে রথযাত্রাটি বিকেল ৫টায় বের হয়। পথিমধ্যে সেউজগাড়ী আমতলা মোড় এলাকায় পৌঁছালে রথের গম্বুজটি রাস্তার ওপরে থাকা হাইভোল্টেজের বৈদ্যুতিক তারের সংস্পর্শে আসে। রথের গম্বুজটি স্টিলের হওয়ায় বৈদ্যুতিক তারের সংস্পর্শে আসার সঙ্গে সঙ্গে তারে আগুন লেগে যায়। তদন্ত কমিটি বগুড়ার জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানান, ঘটনাটি তদন্তের জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের (এডিএম) নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত টিমও গঠন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে সৎকারের জন্য প্রত্যেক নিহতের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হবে। এ ছাড়া আহতদের যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রয়োজনে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদেরকে ঢাকা বা অন্য কোনো বিশেষায়িত হাসপাতালে পাঠানো হবে। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের বগুড়া পৌর কমিটির পরিমল প্রসাদ রাজ জানান, রথ যাত্রার শুরুতে দুঃখজনখ হতাহতের ঘটনা ঘটার পর রথযাত্রাটি কিছু সময় থামিয়ে রাখা হয়েছিল। তবে পরে সেটি শুরু করা হয় এবং সংক্ষিপ্তভাবে শেষ করা হয়। বিদ্যুতের তার থেকে সাবধান থাকতে বার বার বলা হয়েছিল। ঘটনার পর পরই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করা হয় নর্দান ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) নির্বাহী প্রকৌশলী-১ আব্দুল মান্নাফ জানান, বিকেল সোয়া ৫টার দিকে রথের গাড়িতে বিদ্যুৎস্পর্শের ঘটনার খবর পাওয়ার পর পরই স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশে ওই এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের যে তার সড়কের ওপর দিয়ে পারাপার করা হয়েছে সেগুলোর উচ্চতা ছিল ১০ মিটার। ধারণা করা হচ্ছে রথের গাড়িতে এমন কোনো উঁচু দণ্ড যুক্ত করা হয়েছিল যেটি বিদ্যুৎ পরিবাহী। আর সে কারণেই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। বগুড়ার জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ঘটনাস্থল অর্থাৎ শহরের সেউজগাড়িসহ সংলগ্ন এলাকায় আপাতত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পেলে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরায় চালু করা হবে। উল্লেখ্য, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় অনুষ্ঠান শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসব শুরু হয়েছে রোববার। হিন্দু রীতি অনুযায়ী, প্রতি বছর চন্দ্র আষাঢ়ের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে শুরু হয় জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা। বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রাসহ নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে আনন্দমুখর পরিবেশে ৯ দিনব্যাপী শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা মহোৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। আগামী ১৫ জুলাই বিকেল ৩টায় উল্টো রথের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে এ উৎসব শেষ হবে।

By তালাশ বাংলা ডেস্ক

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ আক্কাস আল মাহমুদ হৃদয়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *